মহাত্মা গান্ধীর কিছু অজানা তথ্য
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, স্বাধীন ভারতের জাতির জনক। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সক্রিয়ভাবে করেছেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন। অসহযোগ, সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ গান্ধী ছিলেন অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী। এজন্য তার সাথে বিরোধ দেখা দিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকা অপরাপর নেতৃবৃন্দের। তবু তিনি হয়েছেন ভারতের ইতিহাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। মহাত্মা গান্ধীর অজানা কিছু তথ্য নিয়েই আজ হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে।
পুরো পৃথিবী তিনি হেটেছিলেন দুইবার!
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তখন জমে উঠেছে। প্রতিবাদ,বিক্ষোভের অভিনব সব স্টাইল দিয়ে ভিত কাঁপিয়ে দেয়া হচ্ছে ব্রিটিশদের। মহাত্মা গান্ধীর লবণ আন্দোলন ছিল এমনই এক ভিন্নধর্মী বিদ্রোহ। এই আন্দোলনে গান্ধী খালি পায়ে চষে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্ত। প্রতিদিন প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ তিনি হেটে বেড়াতেন। ১৯১৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতার দাবিতে ৭৯,০০০ কিলোমিটার রাস্তা হেটেছেন মহাত্মা গান্ধী। যা প্রায় দুইবার পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সমান!
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন গান্ধী
জীবনের প্রথম দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থাকাকালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নিজেকে জড়িয়ে নেন গান্ধী। দক্ষিণ আফ্রিকা থাকাকালে জুলুর যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর স্ট্রেচার বহনকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশদের যুদ্ধনীতির সমর্থক ছিলেন তিনি।
হিটলারের কাছে চিঠি
পৃথিবীতে বেজে উঠেছে আরেকটি মহাযুদ্ধের দামামা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত না শুকাতেই বৃহৎ শক্তিগুলো জড়িয়ে পড়েছে আরেকটি প্রাণঘাতী যুদ্ধে। অহিংসার আদর্শধারী গান্ধী বিচলিত হয়ে পড়লেন। যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখলেন জার্মানির নাজিবাহিনির প্রধান এডলফ হিটলারকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই চিঠি হিটলার বরাবর পৌছায় নি। ব্রিটিশরা এই চিঠি প্রেরণ আটকে দেয়।
গান্ধীর সম্মানে ডাকটিকেট ছেপেছিল ব্রিটেন
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। কখনো আলোচনার টেবিলে বসে কখনোবা সরাসরি বিদ্রোহ করে বিদায় করতে চেয়েছেন ভারতবর্ষ থেকে। যেই গান্ধীর কাছে ব্রিটিশদের হতে হয়েছিল নাস্তানাবুদ সেই ব্রিটিশরাই তাকে সম্মানিত করেছিল ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬৯ সালে তার নামে ডাকটিকেট ছেপে।
তিন তিনটি ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গান্ধী!
মহাত্মা গান্ধীর নাম শুনলেই অবলীলায় চলে আসে একজন নেংটি পরা বৃদ্ধ হেলেদুলে হাটছেন, আন্দোলন করছেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু ভারতে আসার আগে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনটি ফুটবল ক্লাব। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান, প্রিটোরিয়া ও জোহানেসবার্গ শহরে তিনটি ফুটবল ক্লাবের নাম ছিল অভিন্ন, Passive resister soccer club.
ছিলেন সক্রিয় সাংবাদিক
তার ৪০ বছরের সংগ্রামী জীবনে তার কলম থেকে বেরিয়ে এসেছিল প্রায় দশ মিলিয়ন শব্দ। জীবনের কিছু সময় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। রাজনীতি থেকে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্তর লেখালেখি করা গান্ধী উচ্চকিত ছিলেন বাল্যবিবাহ, মাদকের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইংরেজি,হিন্দি, গুজরাটি সংবাদপত্রে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রকাশিত ভারতীয় পত্রিকায়ও তিনি সম্পাদনার কাজ করেছেন বহু বছর।
শুক্রবার এবং শুক্রবার
মহাত্মা গান্ধীর পুরো জীবনে শুক্রবার দিনটি বারবার কাকতালীয়ভাবে এসেছে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন শুক্রবারে, ভারত স্বাধীন হয় শুক্রবারে এবং এই শুক্রবারেই তিনি নিখোঁজ হন।
৫ বার মনোনীত হয়েও পাননি নোবেল
অহিংসা ও শান্তির বাণী আজন্ম প্রচার করেছেন যে মানুষটি, যিনি ভারত স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন শান্তি আর সহনশীলতা দিয়ে সেই মহাত্মা গান্ধী পাঁচবার মনোনয়ন পেয়েও পাননি নোবেল শান্তি পুরস্কার। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯ এবং ১৯৪৭ সালে মনোনয়ন পাওয়া গান্ধীকে ১৯৪৮ সালে নোবেল শান্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরে ঐ পুরস্কারটি বাতিল করে দেয় নোবেল কর্তৃপক্ষ।
লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু