বেনিতো মুসোলিনীর অজানা ইতিহাস

বেনিতো মুসোলিনীর অজানা ইতিহাস

ইতিহাস কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট দলের নেতা ইতালির স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনী। যিনি এডলফ হিটলারের সমান্তরালে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কুখ্যাত এক শাসকে। স্বৈরশাসকের উদাহরণ হিসেনবে আজো যিনি জনপ্রিয়। প্রথম জীবনে সোশালিস্ট হয়েও পরবর্তীতে দোর্দণ্ড ফ্যাসিবাদ কায়েম করে ইতালি তথা বিশ্ব ইতিহাসে এক নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার কিছু চমকপ্রদ তথ্যই জানা যাক এবার।

যৌবনেই মুসোলিনী ছিলেন কলহ প্রিয়

১৮৩৩ সালে জন্ম নেয়া এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক তার বাল্যকাল থেকেই ছিলেন রগচটা স্বভাবের। মারামারি আর কলহ ছিল তার স্বভাবসিদ্ধ গুণ। তার ১০ বছর বয়সে একটি ধর্মীয় স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তার এক ক্লাসমেটকে ছুরিকাহত করে। এই স্কুল থেকে বের হয়ে নতুন স্কুলে গিয়েও একই কাণ্ড ঘটান বেনিতো মুসোলিনী। এছাড়া গির্জায় গিয়ে মানুষদের অযথাই চিমটি কেটে বিরক্ত করার জন্যও তিনি ছিলেন পরিচিত। মুসোলিনী তার কিশোর বয়সে একটা গ্যাং এর নেতৃত্ব দিতেন যাদের কাজ ছিল কৃষকের ফসলে হানা দেয়া।

ফ্যাসিস্ট হওয়ার আগে মুসোলিনী ছিলেন একজন সমাজতান্ত্রিক!

সমাজতান্ত্রিক বাবার ঘরে জন্ম নেয়া মুসোলিনীর নাম রাখা হয়েছিল বিখ্যাত মেক্সিকান বামপন্থী প্রেসিডেন্ট বেনিতো জুয়ারেজের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। তার দুইটি মিডল নেম এমিলকেয়ার এবং আন্দ্রে রাখা হয়েছিল ইতালিয়ান বামপন্থী নেতা  এমিলকেয়ার কিপ্রিয়ানি এবং আন্দ্রে কস্টার নাম থেকে। ১৯০২ থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে থাকাকালীন সময়ে মুসোলিনী নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক সত্তাকে জীবন্ত করার প্রয়াস পান এবং সেখানকার সমাজতান্ত্রিক সাময়িকীতে লেখালেখি শুরু করেন। একজন সাংবাদিক ও শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করার আগে প্রায় দুই বছর তিনি ইতালিয়ান বাহিনীতে সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  তার লেখালেখিতে সবসময় সহিংস বিপ্লব এবং কার্ল মার্ক্সের দর্শনের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ এবং দেশপ্রেমের বিরুদ্ধে সমালোচনা খুঁজে পাওয়া যেত।  ১৯১২ সালে মুসোলিনী ইতালির সমাজতান্ত্রিক দলের দৈনিক ফরওয়ার্ড এর সম্পাদক বনে যান ভবিষ্যতের এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক। কিন্তু তার  দুই বছর পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিজের সমর্থন প্রকাশ করলে মুসোলিনীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরিবর্তিত মুসোলিনী এবার নিজের ফ্যাসিস্ট আন্দোলন গড়ে তুলেন যার চূড়ান্ত রূপ পায় দ্য ফ্যাসিস্ট পার্টি নামে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মুসোলিনীর বিপ্লব থামাতে পারেননি

সমাজতান্ত্রিক মুসোলিনীর পতনের পর এনার্কিস্ট মুসোলিনী এবার তার ফ্যাসিস্ট স্কোয়াড  নিয়ে বিপ্লব শুরু করে দেন। যা থামানোর সাধ্য ছিল না প্রধানমন্ত্রীর। এমনকি তিনি তার সেনাবাহিনীকেও এ ব্যাপারে কোন নির্দেশ দিতে পারেননি। ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল নাগাদ ফ্যাসিস্ট বাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে যৎসামান্য প্রতিরোধের মুখে পুরো দেশ চষে বেড়ায় এবং প্রায় ২ হাজার রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যা করে। অক্টোবর ২৪, ১৯২২ সালে মার্চ অন রোম নামে ইতালির ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা নেয় ফ্যাসিস্ট বাহিনী। আর তাতে সন্ত্রস্ত ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানান। অক্টোবরের ২৭ তারিখ ফ্যাসিস্ট বাহিনী সরকারি অফিস ও টেলিফোন লাইন দখল করে নিলে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে সামরিক আইন জারি করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দ্যোদুল্যমান প্রেসিডেন্ট তা না করলে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর কাছে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী।

১৯২৫ সালের আগ পর্যন্ত ওতোটা স্বৈরাচারী ছিলেন না মুসোলিনী

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বেনিতো মুসোলিনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করেন, সংবাদপত্রগুলোর টুটি চেপে ধরেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের গণগ্রেফতার শুরু করেন। সাথে তার ফ্যাসিস্ট বাহিনীর সকল অপরাধ না দেখার ভান  করতে থাকেন। কিন্তু তারপরেও ১৯২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তার শাসনে সংসদীয় ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু ১৯২৫ ও ১৯২৬ সালে পরপর কয়েকবার তার উপর গুপ্তহত্যার চেষ্টা চালানো হলে তিনি নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতালির ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটর হিসেবে  ঘোষণা করেন। রাজনৈতিক দলদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, ১০০ জন সংসদ সদস্যদের সংসদ থেকে বের করে দেন এবং রাজনৈতিক অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চালু করে ইতালিতে নিরংকুশ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেন তিনি।

গির্জাভক্ত মুসোলিনী পূর্বে ছিলেন গির্জা বিদ্বেষী

সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগী বেনিতো মুসোলিনী তার প্রথম জীবনে ঘোরতর নাস্তিক এবং ব্যক্তিগতভাবে চরম মাত্রায় গির্জা বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি দাবি করতেন একমাত্র মূর্খেরাই বাইবেলের গল্পগুলো বিশ্বাস করবে। এমনকি মুসোলিনী যাজকতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ছোট পুস্তিকাও রচনা করেন। কিন্তু ক্ষমতা হাতে পেয়েই বদলে যান এই স্বৈরশাসক। গির্জানুরাগী হয়ে উঠেন তিনি। আর এর খাতিরে তার আমলে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। যাজকদের কর প্রদান থেকে নিষ্কৃতি, ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত নিষিদ্ধকরণ, জন্মহার বৃদ্ধিতে উৎসাহিতকরণ, নারীদের পোশাক নিয়ন্ত্রিতকরণ, সমকামীতা নিষিদ্ধকরণের মত পদক্ষেপ তার খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি অনুরাগের প্রমাণ দেয়।

তথ্যসূত্রঃ

  • History.com

লেখকঃ উবায়দুর রহমান রাজু

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top