জোসেপ ডিয়েট্রিচ – নাৎসি পার্টির সমস্ত নিষ্ঠুর কর্মকান্ডের নৃশংসদের মধ্যেও নৃশংসতমদের একজন

জোসেপ ডিয়েট্রিচ

নাৎসি পার্টির সমস্ত নিষ্ঠুর কর্মকান্ডের নৃশংসদের মধ্যেও নৃশংসতমদের একজন

নাৎসি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনার দিক থেকে যে কয়েকজন নাৎসি নেতার নাম প্রথম সারিতে আসে তাদের মধ্যে নৃশংসতম একজন হলেন জোসেপ ডিয়েট্রিচ (১৯৮২- ১৯৬৬)। হিটলারের উত্থান থেকে পতন পর্যন্ত তার সমস্ত নৃশংস কর্মকান্ডে নেতৃত্ব প্রদান করেন এই নাৎসি নেতা।

জন্ম ১৯৮২ সালের মে মাসে মেমিং জেনের কাছের হাওয়ালজেনে। পূর্ন নাম জোসেপ ডিয়েট্রিচ হলেও সাধারণভাবে সেপ নামে পরিচিত এই লোকটি ছিলো প্রকৃতপক্ষেই কসাই, অদ্ভুতভাবে তার ব্যক্তিত্ব ও বাকি জীবন গড়ে উঠেছিল এই পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই।

তার জীবনের চরম ও নিষ্ঠুরতম অধ্যায়ের শুরুটা হয় ১৯১১ সালে জার্মান রাজকীয় ফৌজে যোগ দেয়ার মাধ্যমে, আর কালক্রমে পদোন্নতি পেয়ে পে-মাস্টার সার্জেন্ট পদে উন্নিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নানান জটিলতায় চাকরি ছেড়ে দেয়। যুদ্ধ শেষ হবার পর জীবিকার সন্ধ্যানে বিভিন্ন পেশায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করে।

এদিকে জার্মানিতে নাৎসি পার্টি গড়ে ওঠার মুখেই সে শুরুতেই যোগ দেয় নাৎসি পার্টিতে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক এই লোকটিকে নাৎসি পার্টির সমস্ত নিষ্ঠুর নৃশংসদের মধ্যেও নৃশংসতমদের একজন বলে বর্ণনা করেছেন। হিটলার তার নাৎসি পার্টির প্রতি ডেডিকেশান দেখে তাকে নিজের গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে মনোনিত করেছিল আর দিয়েছিলো এস এস বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদ।

এর মধ্যে দিয়েই তার ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখানো শুরু হয়। এস এস বাহিনী ও নাৎসি পার্টি দুদিকেই সে তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকে ধীরে ধীরে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩০ সালে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়, অন্যদিকে ১৯৩১ সালে এস এস বাহিনীর ল্যাফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান।

১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর তার ক্ষমতা যেনো আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। হিটলার তার নৃশংসতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বিভিন্ন উচ্চ পদ দিতে থাকে। রক্তাক্ত মোচন ব্যার্থ হলে হিটলার তাকে নামের এক বৃহৎ তালিকা তার হাতে দিয়ে তাকে পাঠায় বার্লিনের বিচার বিভাগের দপ্তরে, যাতে একজনও হিটলার বিরোধী বেঁচে থাকতে না পারে। হিটলার তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয় যেনো তার বিশ্বাসভাজন ১ জন ও ৬ জন এস এস সদস্যকে সাথে নিয়ে ব্যারাকে বন্দিদের গুলি করে মারতে।

 সে হিটলারের মন জয় করতে সেই হুকুম পুঙ্খানুপুঙ্খু পালন করে। বন্দিদের কেউ কেউ ছিলো তার পুরোনো দিনের সঙ্গী যারা তার সাথেই নাৎসি পার্টিতে যোগ দিয়েছিলো।  তারা বৃথাই কাকুতি মিনতি করে বলেছিল “সেপ আমরা নির্দোষ, আমাদের হত্যা করার আগে অন্তত বলো আমাদের অপরাধ কি!?” সেপের জবাব ছিলো- “ফুয়েরার তোমাদের দোষী বলেছে, কাজেই তোমাদের মরতে হবে, এছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ আমার জানা নেই”।

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলার সেপ কে যুদ্ধের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মত দায়িত্বগুলো দেয়, এবং সেপ তার সকল দায়িত্ব হিটলারের চাওয়ামত ভালোমত পালন করতে সক্ষম হয়। হিটলারের হুকুমে তাকে আর তার জীবিত সঙ্গীদের নানান সময়ে বহু পুরষ্কারে পুরষ্কৃত করা হয়। কিন্তু সেপ একবার হিটলারের মন মতো কাজ করতে ব্যর্থ হওয়াতেই আবারো হিটলারের হুকুমেই তার সব পুরষ্কার কেড়ে নেয়া হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে অন্যান্য নাৎসি নেতাদের মত জোসেপও আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়ে। অন্য অনেক নৃশংস নাৎসির মতই তার উপরও আমেরিকানদের কৃপা দৃষ্টি ঝরে পড়ে। তার বিরুদ্ধে সমস্ত হত্যা, নিষ্ঠুরতার অভিযোগ মাফ করে দেয় মার্কিন বিচারবিভাগ। কেবলমাত্র ১৯৪৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালমেডির কাছে ৭১জন আমেরিকান যুদ্ধবন্দিকে খুনের অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়, সেই অভিযোগে তার সাথে তার সঙ্গী আরো ৪২ জন এস এস অফিসার বিরুদ্ধে। মার্কিন আদালত আবার দয়াপরবশ হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে ২৫ বছরেরে কারাদন্ডের আদেশ দেয়।  তারপর আবারো কোন এক অজানা কারনে দয়া পরবশ হয়ে ২৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ নামিয়ে আনে ১০ বছরে। কিন্তু এই দশ বছরের জেলও তাকে খাটতে হয়নি। শৈশব কৈশোরের দরিদ্র এই নাৎসি কসাই আমেরিকানদের দৌলতে প্রভূত বিত্তের অধিকারী হয়ে লুডউইগসবুর্গে ১৯৬৬-র ২১ এপ্রিল মারা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top